Tea and Scones
চা এবং স্কনস (Tea and Scones) যুক্তরাজ্যের একটি জনপ্রিয় খাবার, যা সাধারণত বিকেলের নাস্তা হিসেবে উপভোগ করা হয়। এই খাবারটির ইতিহাস প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে শুরু হয়। সেই সময়ের aristocrats এবং উচ্চবিত্ত সমাজের মহিলারা বিকেলের দিকে একটি লঘু খাবারের প্রয়োজন অনুভব করেন, যা চা এবং কিছু পেস্ট্রি বা কেকের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। চা সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তা পায় এবং স্কনসও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। এই যুগে চা এবং স্কনস একসাথে পরিবেশন করা একটি সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে। স্কনস আসলে একটি মিষ্টি রুটির মতো, যা সাধারণত ময়দা, মাখন, চিনির সঙ্গে দুধ এবং বেকিং পাউডার দিয়ে তৈরি হয়। স্কনসের বৈশিষ্ট্য হলো এর তুলনামূলকভাবে নরম এবং হালকা গঠন। সাধারণত, এটি গোলাকার বা ত্রিভুজাকারে কাটা হয় এবং ওভেনে ভালভাবে বেক করা হয়। স্কনসের মিষ্টি স্বাদ এবং খাস্তা বাইরের স্তর এটি এক বিশেষ আকর্ষণীয় খাবারে পরিণত করে। স্কনসের মধ্যে বিভিন্ন স্বাদের উপাদান যুক্ত করা যেতে পারে, যেমন শুকনো ফল, চকলেট চিপস বা ক্রিম। চা সাধারণত সাদা চা, দুধ চা বা হার্বাল চা হতে পারে। ইংল্যান্ডে সাধারণত ব্ল্যাক টি বা অ্যাসাম চা বেশি জনপ্রিয়, যা দুধ এবং চিনি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। চা এবং স্কনসের সংমিশ্রণ একটি চমৎকার স্বাদের অভিজ্ঞতা তৈরি করে। স্কনসকে সাধারণত পরিবেশন করার সময় এতে ক্রিম এবং জাম যুক্ত করা হয়, যা স্বাদের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ক্লটেড ক্রিম বা হেভি ক্রিম স্কনসের সাথে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। চা এবং স্কনসের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া খুব সহজ। প্রথমে উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি নরম ময়দা তৈরি করতে হয়। এরপর ময়দাটি একটি রোলিং পিন দিয়ে পাতলা করা হয় এবং গোলাকার আকারে কাটা হয়। প্রস্তুত স্কনসগুলোকে ওভেনে ১৫-২০ মিনিট বেক করতে হয়। বেকিংয়ের সময় স্কনসগুলো উঁচুতে উঠে যায় এবং সোনালী রঙ ধারণ করে। এই খাবারটি শুধু মিষ্টি স্বাদের জন্য নয়, বরং এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্যও বিশেষ। চা এবং স্কনসের পরিবেশন একটি তৃপ্তিদায়ক বিকেলকে স্মরণীয় করে তোলে, যেখানে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার একসাথে সময় কাটানোর সুযোগ পায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ অভিজ্ঞতা, যা আজও সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
How It Became This Dish
চা এবং স্কোনস: একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ভ্রমণ চা এবং স্কোনস, এই দুটি শব্দই ইংল্যান্ডের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই খাবারদাবারদ্বয়ের ইতিহাস অনেক পুরনো এবং এটি কেবল পুষ্টি নয়, বরং ইংরেজি সমাজের একটি প্রথাগত অংশ হিসেবেও বিবেচিত হয়। আসুন আমরা দেখি চা এবং স্কোনসের উত্পত্তি, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের বিকাশের কাহিনী। উত্পত্তি চা এবং স্কোনসের ইতিহাস শুরু হয় ১৮শ শতকের ইংল্যান্ডে। চা প্রথমে চীন থেকে আনা হয় এবং ১৬শ শতকের শেষের দিকে এটি ইউরোপে প্রবেশ করে। যদিও চা খাওয়ার রীতি প্রথমে শুধুমাত্র উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে ধীরে ধীরে এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি ইংল্যান্ডে একটি বিশেষ সামাজিক আচার হয়ে দাঁড়ায়। স্কোনসের উত্পত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন যে স্কোনসের উৎপত্তি স্কটল্যান্ডে, বিশেষত ১৫শ শতকের শেষের দিকে। তবে, এটি ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ১৭শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। প্রাথমিকভাবে, স্কোনস ছিল একটি কঠিন রুটির মতো, যা সাধারণত দুধ এবং ময়দা দিয়ে তৈরি করা হতো। সাংস্কৃতিক গুরুত্ব চা এবং স্কোনসের রীতি ১৮২০ সালের দিকে "আফটন টিফিন" নামে পরিচিত একটি মধ্যাহ্নভোজের সময়ে জনপ্রিয় হয়। এই সময়ের মধ্যে, উচ্চবিত্ত মহিলারা তাদের অতিথিদের জন্য চা পরিবেশন করতেন, যেখানে স্কোনস, জ্যাম এবং ক্রিমের সাথে পরিবেশন করা হতো। এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে আলোচনার পাশাপাশি খাবার উপভোগ করার একটি সুযোগ ছিল। "আফটন টিফিন" এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে চা এবং স্কোনসের একটি বিশেষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে, চা এবং স্কোনস খাওয়ার মাধ্যমে মহিলারা নিজেদের সামাজিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারতেন এবং এটি তাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতো। সময়ের সঙ্গে বিকাশ ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, চা এবং স্কোনসের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়। চা খাওয়ার সময় বিভিন্ন রকমের স্কোনস তৈরি হতে শুরু করে, যেমন ফলের স্কোনস, চকোলেট স্কোনস ইত্যাদি। এই বৈচিত্র্য চা এবং স্কোনসকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল এবং এটি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। চা এবং স্কোনসের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, এটি কেবল উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯শ শতকের শেষের দিকে, বিভিন্ন ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁতে চা এবং স্কোনস পরিবেশন করা শুরু হয়েছিল। এই সময়, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্তে চা এবং স্কোনস খাওয়ার রীতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি একটি জাতীয় খাদ্য সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। আধুনিক যুগ বর্তমান যুগে, চা এবং স্কোনস শুধু ইংল্যান্ডেই নয়, সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশে এই খাবারের বিভিন্ন সংস্করণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি "আফটন টিফিন" নামে পরিচিত হয় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরণের স্কোনস তৈরি করা হয়, যা স্থানীয় উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। অবশ্যই, চা এবং স্কোনসের সংস্কৃতি এখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সামাজিক মিডিয়া এবং খাদ্য ব্লগারদের কারণে, এই খাবারদাবার সম্বন্ধে আরও বেশি মানুষ জানছে এবং এটি তাদের নিজস্ব সংস্করণে তৈরি করছে। উপসংহার চা এবং স্কোনসের ইতিহাস একটি সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক রূপান্তরের গল্প। এটি কেবল একটি খাবার নয়, বরং একটি সামাজিক অনুষ্ঠান, যা ইংল্যান্ডের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সময়ের সাথে সাথে, এই খাবারদাবারটি বিভিন্ন রূপে বিবর্তিত হয়েছে এবং এখন এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ। এই ঐতিহ্যবাহী খাবারদাবার নিয়ে আজও আলোচনা ও উৎসব হয়, যা প্রমাণ করে যে চা এবং স্কোনস শুধুমাত্র খাবার নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক চিহ্ন, যা ইতিহাস এবং সামাজিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চা এবং স্কোনসের সঙ্গে আমরা আমাদের অতীতের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারি এবং তা আমাদের সমাজে একত্রিত হওয়ার একটি সুযোগ হিসেবে কাজ করে।
You may like
Discover local flavors from United Kingdom