Pineapple Cake
鳳梨酥, যা বাংলায় "আনারসের কেক" নামে পরিচিত, এটি তাইওয়ানের একটি প্রখ্যাত মিষ্টান্ন। এই মিষ্টির ইতিহাস প্রাচীন, এবং এটি তাইওয়ানের সংস্কৃতি এবং খাদ্য ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মূলত ১৯শ শতকের শেষের দিকে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে, যখন ইউরোপীয় এবং চীনা খাবারের প্রভাব তাইওয়ানে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর নাম "鳳梨" (আনারস) এবং "酥" (কেক) শব্দ দুটি থেকে এসেছে, যা এর মূল উপাদান এবং প্রকারভেদ নির্দেশ করে। 鳳梨酥-এর স্বাদ অত্যন্ত বিশেষ। এটি সাধারণত মিষ্টি, তবে সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হলে এর মধ্যে একটি হালকা টক স্বাদও থাকে, যা আনারসের স্বাদ থেকে আসে। এর বাইরে একটি ক্রিস্পি এবং মসৃণ মাখনের মতো বাইরের আবরণ রয়েছে, যা কেকটিকে একটি চমৎকার টেক্সচার প্রদান করে। ভিতরে থাকা আনারসের পুরটি মিষ্টি এবং সুগন্ধি, যা কেকের সাধারণ স্বাদের সাথে একটি আকর্ষণীয় বৈপরীত্য সৃষ্টি করে। 鳳梨酥 প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ হলেও এতে সময় এবং যত্নের প্রয়োজন। প্রথমে, আনারসের পুর তৈরি করা হয়। তাজা আনারসকে ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে চিনি এবং কিছু মশলা (যেমন দারুচিনি) দিয়ে রান্না করা হয় যতক্ষণ না এটি ঘন এবং মিষ্টি হয়ে যায়। এই পুরটি ঠাণ্ডা হতে দেওয়া হয়। এরপর কেকের বাইরের আবরণ তৈরি করা হয়, যা সাধারণত ময়দা, মাখন, চিনি এবং দুধ দিয়ে তৈরি হয়। ময়দাটি একটি নরম এবং মসৃণ টেস্টারে তৈরি হয় যাতে এটি সহজে মোল্ড করা যায়। পরবর্তী ধাপে, কেকের আবরণ থেকে একটি ছোট বল তৈরি করা হয় এবং এর মাঝে আনারসের পুরটি রাখা হয়। তারপর এই বলগুলোকে মসৃণ করে একটি কেকের আকার দেওয়া হয়। কেকগুলোকে সাধারণত ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রায় ২০-২৫ মিনিট বেক করা হয়, যতক্ষণ না সেগুলো সোনালী এবং সুগন্ধি হয়ে ওঠে। বেকিংয়ের পরে, কেকগুলো ঠাণ্ডা হতে দেওয়া হয় এবং তারপর প্যাকেজিং করা হয়। 鳳梨酥 শুধু তাইওয়ানের একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন নয়, বরং এটি দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি চিহ্ন। এটি উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্যও খুব জনপ্রিয়। এই মিষ্টির মাধ্যমে তাইওয়ানের আনারসের স্বাদ এবং সংস্কৃতি বিশ্বের কাছে পৌঁছায়, যা এটি একটি বিশেষ স্থান করে দিয়েছে।
How It Became This Dish
ফেংলি সুরের ইতিহাস: তাইওয়ানের এক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ফেংলি সুর (鳳梨酥), যা ইংরেজিতে Pineapple Cake নামে পরিচিত, তাইওয়ানের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। এই মিষ্টিটি কেকের মতো দেখতে এবং সাধারণত পাইনঅ্যাপল জামের সাথে পূর্ণ থাকে। তাইওয়ানের খাদ্য সংস্কৃতিতে এর একটি বিশেষ স্থান রয়েছে এবং এটি দেশটির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই লেখায় আমরা ফেংলি সুরের উৎপত্তি, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং সময়ের সাথে এর বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। #### উৎপত্তি ফেংলি সুরের উৎপত্তি ১৯শ শতকের শেষ দিকে। এই সময়ে তাইওয়ান একটি কৃষি ভিত্তিক সমাজ ছিল এবং দেশটি প্রধানত চাষাবাদ ও কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল ছিল। তখনকার সময়ে, পাইনঅ্যাপল (ফেংলি) একটি জনপ্রিয় ফল ছিল। চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আসা অভিবাসীরা এই ফলের চাষ শুরু করে এবং এটি ধীরে ধীরে তাইওয়ানের কৃষি ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। ফেংলি সুরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯০০ সালের আশেপাশে। তখনকার সময়ে, এটি মূলত একটি স্থানীয় মিষ্টি হিসেবে পরিচিত ছিল, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হতো। পাইনঅ্যাপল জ্যাম দিয়ে তৈরি এই মিষ্টিটি আকারে ছোট এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এর স্বাদ এবং গন্ধ মানুষকে আকৃষ্ট করত এবং দ্রুত এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। #### সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ফেংলি সুর শুধুমাত্র একটি মিষ্টি নয়, বরং এটি তাইওয়ানের সংস্কৃতির একটি অংশ। এটি বিশেষ করে উৎসব, অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশে পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে, এটি চীনা নববর্ষের সময় খুব জনপ্রিয়। এই সময়ে, পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে একে অপরকে ফেংলি সুর উপহার দেওয়া হয়, যা ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফেংলি সুরের সঙ্গে আরও একটি সাংস্কৃতিক গল্প জড়িত। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, পাইনঅ্যাপল ফলের চীনা নামের উচ্চারণ (ফেংলি) "শুভ সংবাদ" বা "সমৃদ্ধি" এর সাথে মিল রয়েছে। তাই, এটি উপহার হিসেবে দেওয়া হলে, এটি সমৃদ্ধি এবং সুখের বার্তা বহন করে। #### সময়ের সাথে বিকাশ যদিও ফেংলি সুরের উৎপত্তি স্থানীয়, তবে সময়ের সাথে সাথে এটি আরও উন্নত ও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। ১৯শ শতকের শেষ থেকে ২০শ শতকের প্রথমার্ধে, এটি বিভিন্ন রকমের মিষ্টির দোকানে বিক্রি হতে শুরু করে। দোকানদাররা বিভিন্ন স্বাদের এবং আকারের ফেংলি সুর তৈরি করতে শুরু করেন, যেমন ডার্ক চকলেট, স্ট্রবেরি এবং অন্যান্য ফলের স্বাদে। ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে, তাইওয়ান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ফেংলি সুরের উৎপাদন বাড়ানো হয়। এটি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি লাভ করে এবং বিদেশে তাইওয়ানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। তাইওয়ান থেকে বিদেশে যাওয়া নাগরিকরা নিজেদের সঙ্গে ফেংলি সুর নিয়ে যেতে শুরু করে, ফলে এটি আন্তর্জাতিক মিষ্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে, ফেংলি সুর তাইওয়ানের একটি আইকনিক মিষ্টি। এটি বিভিন্ন উৎসবে, বিশেষ করে চীনা নববর্ষে, বিয়ের অনুষ্ঠানে এবং জন্মদিনের পার্টিতে পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং মিষ্টির দোকান ফেংলি সুরের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করছে, যা দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। #### নির্মাণ প্রক্রিয়া ফেংলি সুর তৈরি করার প্রক্রিয়া অসাধারণ এবং এটি একটি আর্টের মতো। সাধারণত, এর জন্য ময়দা, মাখন, চিনি এবং পাইনঅ্যাপল জ্যাম ব্যবহার করা হয়। প্রথমে, ময়দা এবং মাখন মিশিয়ে একটি নরম আটা তৈরি করা হয়। এরপর এই আটা ছোট টুকরো করে নিয়ে তা পাইনঅ্যাপল জ্যামে ভরে দেওয়া হয়। শেষে, এই ভরা আটা বেক করা হয়, যা মিষ্টির গন্ধ এবং স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে। গত কয়েক বছরে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন স্বাদের সংযোজনের ফলে ফেংলি সুরের উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত হয়েছে। এখন এটি বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভার এবং নকশায় পাওয়া যায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। #### উপসংহার ফেংলি সুর তাইওয়ানের মিষ্টির সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর উৎপত্তি, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং সময়ের সাথে বিকাশ আমাদেরকে তাইওয়ানের ইতিহাস এবং মানুষের সংস্কৃতির সম্পর্কে ধারণা দেয়। ফেংলি সুর একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি হিসেবে তাইওয়ানের পরিচিতি বৃদ্ধি করেছে এবং এটি আজকের দিনে একটি আন্তর্জাতিক মিষ্টি হিসেবে পরিণত হয়েছে। খাবার শুধু আমাদের পেট ভরায় না, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং পরিচয়ের একটি অংশ। ফেংলি সুর তাইওয়ানের সেই পরিচয়ের একটি সুস্বাদু এবং মিষ্টি অভিব্যক্তি।
You may like
Discover local flavors from Taiwan