Iraq
Overview
ভূগোল ও আবহাওয়া
ইরাক, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত একটি দেশ, যার উত্তর দিকে তুর্কি সীমান্ত, পূর্বে ইরান, দক্ষিণে কুয়েত এবং পশ্চিমে সিরিয়া ও জর্দন রয়েছে। ইরাকের ভূখণ্ডের বড় অংশ মরুভূমি এবং সমভূমি, তবে উত্তরাঞ্চলে কুর্দিস্তান অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। দেশটির আবহাওয়া গ্রীষ্মে অত্যন্ত গরম এবং শীতকালে ঠান্ডা। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক সময় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
সংস্কৃতি ও ইতিহাস
ইরাকের ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই শুরু হয়েছে। এটি সুমেরিয়ান, আক্কাদিয়ান, ব্যাবিলোনিয়ান এবং অ্যাসিরিয়ান সভ্যতার সূতিকাগার। বাগদাদ শহরটি মধ্যযুগে ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। দেশটির সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, যেখানে আরব, কুর্দি, আসিরিয়ান এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় খাদ্য, সংগীত, শিল্প ও নৃত্য ইরাকের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
ইরাকের পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, এবং এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বাগদাদে 'কালিফাতুল ইসলাম' এবং 'বাগদাদের জাতীয় যাদুঘর' দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয়। এছাড়াও, 'বাবিল' এবং 'হিলাক্স' এর প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, এবং 'সামর্রা' এর মহান মসজিদ পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। কুর্দিস্তানের অঞ্চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পাহাড়ি দৃশ্য অবলোকনের জন্য অনেক পর্যটক আসেন।
স্থানীয় জীবনযাত্রা
ইরাকের স্থানীয় জীবনযাত্রা ঐতিহ্যবাহী ও অতিথিপরায়ণ। ইরাকিরা সাধারণত অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত। স্থানীয় বাজারগুলোতে বিভিন্ন রকমের খাদ্য এবং হস্তশিল্প পাওয়া যায়। চা এবং কফি ইরাকি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিকেলে স্থানীয় ক্যাফেতে বসে চা এবং আড্ডা দেওয়া ইরাকিদের কাছে একটি জনপ্রিয় অভ্যাস।
ভ্রমণ সতর্কতা
ভ্রমণের আগে কিছু সতর্কতা নিতে হবে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকুন এবং স্থানীয় সরকারের নির্দেশনা মেনে চলুন। কিছু অঞ্চলে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে, তাই আগে থেকে তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। সর্বদা স্থানীয় আইন ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখান এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
A Glimpse into the Past
ইরাকের ইতিহাস একটি সমৃদ্ধ এবং জটিল কাহিনী, যা হাজার হাজার বছরের পুরনো। এই দেশের ভূমি ছিল প্রাচীন সভ্যতার cradle। এখানে উর, বাবিল, এবং অ্যাশুরের মতো প্রাচীন শহরগুলির জন্ম হয়েছিল।
মেসোপটেমিয়া বা "নদীর মধ্যে দেশ" হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলটি, টিগ্রিস এবং ইউফ্রেতিস নদীর মাঝে অবস্থিত। এই নদীগুলির কারণে কৃষিকাজ এবং নগর সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে কৃষকেরা বসতি গড়ে তুলেছিল এবং সুমেরীয়, অ্যাক্কাদীয়, এবং বাবিলীয় সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
উর শহরটি ইরাকের দক্ষিণে অবস্থিত এবং এটি সুমেরীয় সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এখানে উর নমরুদ নামক এক কিংবদন্তি রাজা জন্মগ্রহণ করেন। উরের মহাকালীন রাজকীয় কবরগুলি আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
বাবিল শহরটি ইরাকের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত এবং এটি প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে অবস্থিত বাবিলের ঝুলন্ত বাগানগুলি প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত। এই শহরের ইতিহাসে রাজা হামুরাবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যিনি আইন ব্যবস্থার জন্য পরিচিত।
নিনেভে ছিল অ্যাশুর সাম্রাজ্যের রাজধানী এবং এটি আধুনিক মসুলের নিকটে অবস্থিত। এখানে অবস্থিত নিনেভের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষগুলি ইতিহাস প্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম শহরগুলির মধ্যে একটি এবং এটি মহান কবি-রাজার জন্য খ্যাত ছিল।
ইরাকের ইসলামী ইতিহাস ৭ম শতকে শুরু হয় যখন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর পর মুসলিমরা বিভিন্ন স্থানে বিস্তার লাভ করে। এ সময় কুফা, বসরা, এবং সামর্রা শহরগুলি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
কারবালার যুদ্ধ ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ঘটে, যা ইসলামী ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এই যুদ্ধে ইমাম হোসেন শাহাদাত বরণ করেন, যা শিয়া মুসলিমদের জন্য গভীর অর্থ বহন করে। কারবালার শহরটি এখন একটি পুণ্যস্থান এবং এখানে প্রতি বছর আশুরার সময় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম আগমন করেন।
মধ্যযুগীয় যুগের পর ইরাকের ইতিহাসে তুর্কিদের এবং পরে আধুনিক যুগের ব্রিটিশদের আগমন ঘটে। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা বাগদাদ দখল করে এবং ১৯২১ সালে ইরাক একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাগদাদ শহরটি ইরাকের রাজধানী এবং এটি ইসলামী স্বর্ণযুগের কেন্দ্র ছিল। এখানে একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রন্থাগার ছিল, যেখানে বিজ্ঞান, দর্শন এবং সাহিত্য বিকশিত হয়েছিল। বাগদাদে আল-মুতাসিমের সময়ে নির্মিত বিখ্যাত হাজারদার সেতু এবং জাহিরি মসজিদ আজও দর্শকদের আকর্ষণ করে।
১৯৭৯ সালে সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং তার শাসনে ইরাকের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় শুরু হয়। ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরাক-ইরান যুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালে কুয়েতে ইরাকের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক মহলে ইরাককে বিতর্কিত করে তোলে।
২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে এবং সাদ্দাম হোসেনের শাসন পতন ঘটে। এই ঘটনাটি ইরাকের রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। অবৈধ অস্ত্রের অভিযোগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর ইরাকের আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাস নতুন মোড় নেয়।
আইএসআইএসের উত্থান ২০১৪ সালে ইরাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয় এবং অনেক নিরীহ মানুষকে আক্রান্ত করে। তবে, ইরাকের সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ২০১৭ সালে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়।
বর্তমান ইরাক একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করেছে। দেশটি এখনও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, তবে পর্যটকদের জন্য এর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য এখনও এক বিরাট আকর্ষণ।
বাগদাদের বাজারগুলি, যেমন মুসলিম বাজার এবং আল-মুতানাব্বি স্ট্রিট, এখানে ভ্রমণকারীদের জন্য স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে।
সামর্রাকারবালানাজাফ শহরটি শিয়া মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুণ্যস্থান।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর দিক থেকে, ইরাকের উত্তরাঞ্চল, যেমন কুর্দিস্তান অঞ্চলে পাহাড়ি এলাকা এবং সবুজ উপত্যকা রয়েছে। এই স্থানগুলি ট্রেকিং এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আদর্শ।
হালাবজামসুলের পুরাতাত্ত্বিক এলাকা বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার নান্দনিকতা তুলে ধরছে। ইরাকের ইতিহাসের গরিমা উপলব্ধি করতে হলে পর্যটকদের অবশ্যই এই স্থানগুলোতে যেতে হবে।
ইরাকের ইতিহাস একটি অদৃশ্য সেতুর মতো, যা অতীতের সাথে বর্তমানের সংযোগ স্থাপন করে। এখানে ভ্রমণ করা মানে শুধুমাত্র একটি দেশ দর্শন নয়, বরং একটি দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া।
Top cities for tourists in Iraq
Discover the Famous Cities That Might Captivate Your Interests
Must-Try Foods You Can't Afford to Miss
Indulge in a Variety of Fantastic Foods During Your Stay in Iraq
May Be Your Next Destinations
People often choose these countries as their next destination