City of Portsmouth
Overview
পোর্টসমাউথের ইতিহাস
পোর্টসমাউথ, ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি শহর, যা ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়ে ভরা। এটি সমুদ্র সৈন্যদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে পরিচিত। ১৯১৮ সালে, পোর্টসমাউথে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান সদরদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়, যা শহরটির গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে। এই শহরের ইতিহাস সমুদ্রের সঙ্গে অঙ্গীভূত, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন প্রাচীন নৌযান এবং যুদ্ধজাহাজ, যেমন হিএমএস ভিক্টোরিয়াস এবং হিএমএস মেরাকলস।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
পোর্টসমাউথের সাংস্কৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত পোর্টসমাউথ মিউজিয়াম এবং ডিউক অফ ইয়র্কস’ সেলিব্রেশন হল স্থানীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। এছাড়াও, শহরের বিভিন্ন উৎসব এবং মার্কেটগুলি যেমন পোর্টসমাউথ ফেস্টিভাল এবং পোর্টসমাউথ ফুড অ্যান্ড ড্রিঙ্ক ফেস্টিভাল পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
শহরের পরিবেশ
পোর্টসমাউথের পরিবেশ প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল। শহরের প্রধান রাস্তা কোনও স্ট্রিট এবং পোর্টসমাউথ শপিং সেন্টার যেখানে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকান এবং স্থানীয় বাজার মিলে এক অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি করে। সৈকতের ধারে অবস্থিত রাইটিং সৈকত এবং পোর্টসমাউথ হারবার মানুষের জন্য একটি স্বস্তির স্থান, যেখানে আপনি সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন।
স্থানীয় খাবার
পোর্টসমাউথের খাদ্য সংস্কৃতি আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময়। এখানে স্থানীয় মাছের বাজারে তাজা সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। ফিশ অ্যান্ড চিপস হল এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার, যা পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়াও, শহরের বিভিন্ন ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁয় স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবারের সমাহার রয়েছে।
শিক্ষা এবং গবেষণা
পোর্টসমাউথের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটি স্থানীয় ছাত্রদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করে এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রদেরও আকৃষ্ট করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম শহরের সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবদান রাখছে।
পর্যটন এবং দর্শনীয় স্থান
পোর্টসমাউথে দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে হ্যাম্পশায়ার কনটেম্পোরারি আর্ট গ্যালারি এবং পোর্টসমাউথ ক্যাথেড্রাল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, ইন্টারন্যাশনাল শিপিং মিউজিয়াম এবং ব্রিটিশ নেভাল মিউজিয়াম সমুদ্র ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী পর্যটকদের জন্য অপরিহার্য।
পোর্টসমাউথের বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি বিদেশী পর্যটকদের জন্য একটি বৈচিত্র্যময় এবং আনন্দময় অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা তাদের মনে দীর্ঘকালীন স্মৃতি রেখে যায়।
How It Becomes to This
পোর্টসমাউথ শহর, যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর, ইতিহাসের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এখানে সমুদ্র, যুদ্ধ এবং নৌবাহিনীর ইতিহাসের সাথে সাথে শিল্প বিপ্লবের গৌরবময় কাহিনীও জড়িয়ে আছে। এর ইতিহাসের শুরু প্রায় ২০০০ বছর আগে, যখন রোমানরা এই ভূমিতে আসেন এবং তারা একটি সামরিক ক্যাম্প স্থাপন করেন। এই ক্যাম্পের নাম ছিল Portus Adurni, যা পরে পোর্টসমাউথের ভিত্তি স্থাপন করে।
রোমানদের পর, মিডল এজে পোর্টসমাউথের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ১২১২ সালে, রাজা জন শহরটিকে একটি রয়্যাল বন্দর হিসেবে ঘোষণা করেন, যা শহরের সামুদ্রিক বাণিজ্যকে আরও উজ্জীবিত করে। এই সময়ে, শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন হয় এবং নির্মিত হয় পোর্টসমাউথের শহর প্রাচীর, যা শহরের সুরক্ষা বৃদ্ধি করে।
১৬০০ সালের দিকে, পোর্টসমাউথ আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময়ে, হেনরি সপ্তমহ্যান্সলু লেয়ার, যা পরবর্তীকালে নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পায়।
১৭শ শতাব্দীতে, পোর্টসমাউথের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় যখন শহরটি ইংল্যান্ডের নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এখানে নির্মিত হয় চার্লস ফোর্ট, যা শহরের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময়ের মধ্যে, পোর্টসমাউথের বন্দরে অনেক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের নৌবাহিনীর গর্ব হয়ে ওঠে।
১৮শ শতাব্দীতে, পোর্টসমাউথে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব পড়ে এবং এখানে নতুন প্রযুক্তি এবং শিল্পের উদ্ভব হয়। পোর্টসমাউথ ডকইয়ার্ড, শিল্প বিপ্লবের সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়, যা নৌযান নির্মাণের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এই ডকইয়ার্ডে নির্মিত যুদ্ধজাহাজগুলি ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে।
১৯শ শতাব্দীতে, পোর্টসমাউথের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এই সময়ে, শহরের উন্নয়ন ঘটতে থাকে এবং এখানে নতুন সড়ক, রেলপথ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। হরস-এন্ড-গ্রাউনড নামক রেলপথ পোর্টসমাউথের সাথে লন্ডনের সংযোগ ঘটায়, যা শহরের বাণিজ্য এবং পর্যটনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।
বিশ্বযুদ্ধের সময় পোর্টসমাউথের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, শহরটি ব্যাপক বোমাবর্ষণের শিকার হয়। তবে, শহরটি তার সংকটময় সময়ের মধ্যেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং যুদ্ধের পর পুনর্গঠন শুরু করে। পোর্টসমাউথ নেভাল মিউজিয়াম শহরের নৌবাহিনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সুরক্ষিত রাখে এবং পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যস্থল।
বর্তমানে, পোর্টসমাউথ একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শহরের অনেক দর্শনীয় স্থান, যেমন পোর্টসমাউথ ক্যাথেড্রাল, হেনরি অষ্টমের ডকইয়ার্ড এবং ব্রিটিশ নেভাল মিউজিয়াম পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শহরের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা স্পিনাকারের টাওয়ার শহরের আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
পোর্টসমাউথের সমুদ্র সৈকত, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবন এবং ইতিহাসের গভীরতা, সবই একত্রিত হয়ে এটিকে একটি অসাধারণ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে। এখানে এসে আপনি ইতিহাসের এক অনন্য ভ্রমণে বের হতে পারেন, যেখানে প্রতিটি কোণে রয়েছে ইতিহাসের একটি গল্প।
শহরের স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি, পোর্টসমাউথের বাজারগুলিতে ঘুরে বেড়ানো এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপলব্ধি করা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। পোর্টসমাউথের পুরানো বাজার বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পণ্যের জন্য বিখ্যাত এবং এটি শহরের প্রাণবন্ত জীবনের পরিচায়ক।
পোর্টসমাউথের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন, পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ। শহরের প্রতিটি কোণে ইতিহাসের ছোঁয়া, যা আপনাকে গতের দিকে নিয়ে যাবে। শহরের ভ্রমণে আপনি যেমন নৌবাহিনীর ইতিহাস জানতে পারবেন, তেমনি আধুনিক সময়ের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবনও উপভোগ করতে পারবেন।
যদি আপনি ইতিহাসপ্রেমী হন, তাহলে পোর্টসমাউথ আপনার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। এখানে আসুন এবং ইতিহাসের একটি অনন্য অধ্যায়ে প্রবেশ করুন যা আপনাকে নিয়ে যাবে প্রাচীন সময় থেকে আধুনিক যুগে।
You May Like
Explore other interesting states in United Kingdom